টাকার জন্যই ফাহিমকে হত্যা, ব্যক্তিগত সহকারী গ্রেফতার

টাকার জন্যই ফাহিমকে হত্যা, ব্যক্তিগত সহকারী গ্রেফতার

বাংলাদেশের আলো ডেস্ক: রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাওয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ (৩৪) হত্যার ঘটনায় তার ব্যক্তিগত সহকারীকে গ্রেপ্তার করেছে নিউইয়র্ক পুলিশ।

দুই পুলিশ কর্মকর্তার বরাতে নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, শুক্রবার ভোরে ফাহিমের ব্যক্তিগত সহকারী টাইরেস ডেভন হাসপিলকে (২১) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম- টাইরেস ডেভন হাসপিল। বয়স ২১ বছর।

পুলিশের ধারণা- বাংলাদেশের এ তরুণ উদ্যোক্তাকে হত্যার পেছনে ডেভনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এবং অর্থ আত্মসাৎ করার জন্যই ফাহিমকে খুন করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে গোয়েন্দাদের বরাতে উল্লেখ করা হয়, হাসপিল ফাহিমের ব্যক্তিগত সহকারী হিসাবে কাজ করেছেন। ফাহিম-এর তার কাছ থেকে কয়েক হাজার ডলার আত্মসাৎ করার পরে তাকে হত্যা করে।

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, ফাহিম একটা সময় জানতে পারেন, হাসপিল তার কাছে থেকে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলেও হাসপিলকে সেটা ফেরত দিতে বলেন ফাহিম। এরপরই এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) নিউইয়র্কের ম্যানহাটন এলাকার নিজ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহর ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে এখনও হত্যার রহস্য জানা যায়নি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধীদের শনাক্তের চেষ্টা করছে পুলিশ।

স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, নজরদারি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজে ফাহিমকে সর্বশেষ অ্যাপার্টমেন্টের লিফটে উঠতে দেখা গেছে। ওই লিফটে তার সঙ্গে সম্পূর্ণ কালো পোশাক পরা একজনকে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। লিফটটি সোজা তার অ্যাপার্টমেন্ট ইউনিটে গিয়ে থেমেছে।

ওই ব্যক্তিকেই সম্ভাব্য খুনি হিসেবে ধারণা করছে পুলিশ। তারা বলছে, ‘অপরাধীর কাছে একটা স্যুটকেস ছিল। সে ছিল খুবই পেশাদার’। ওই ব্যক্তির পরনে ছিল স্যুট, হাতে গ্লাভস ও মাথায় হ্যাট।

নিউইয়র্ক পুলিশের কর্মকর্তা সার্জেন্ট কার্লোস নিভস জানান, ওই অ্যাপার্টমেন্ট থেকেই ফাহিমের খণ্ডবিখণ্ড মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ‘ঘটনাস্থলে আমরা খণ্ড দেহ, বিচ্ছিন্ন করা মাথা ও হাত-পা পেয়েছি’, বলেন তিনি।

পুলিশকে উদ্ধৃত করে ডেইলি নিউজ জানিয়েছে, ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন ফাহিম। দীর্ঘ সময় ভাইয়ের কোনও খোঁজ পাননি বলে মঙ্গলবার ৯১১ নম্বরে ফোন করেন তার বোন। এরপর পুলিশ এসে অ্যাপার্টমেন্টের ৭ম তলা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে।

মরদেহের পাশেই একটি ইলেকট্রিক করাত মেশিনের সন্ধান পায় পুলিশ। খণ্ডবিচ্ছিন্ন অঙ্গগুলো পাওয়া যায় পাশেই রাখা একটি প্লাস্টিক ব্যাগে। ফাহিম সালেহর জন্ম ১৯৮৬ সালে। তার বাবা সালেহ উদ্দিন চট্টগ্রামের, আর মা নোয়াখালীর মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের বেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনফরমেশন সিস্টেম পড়াশোনা করতেন ফাহিম।

২০১৪ সালে নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় ফিরে যৌথভাবে ‘পাঠাও অ্যাপ’ চালু করে নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। নিহত ফাহিম সালেহ বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম পাঠাও ছাড়াও নাইজেরিয়ায় ‘গোকান্ডা’ নামে আরেকটি রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম চালু করেন। পেশায় ওয়েবসাইট ডেভেলপার ফাহিম অ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটাল গ্লোবাল নামক একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানেরও উদ্যোক্তা ছিলেন।

ফাহিমের পরিবারের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে যে অপরাধের কথা উঠে আসছে তা আমরা এখনও মেনে নিতে পারছি না। হত্যাকারীকে গ্রেফতার করা ছাড়া কোনও কথা বা পদক্ষেপ আমাদের মনকে শান্ত করতে পারবে না’।

এতে আরও বলা হয়েছে, নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে আমাদের আহ্বান তারা এই নৃশংস অপরাধের সবকিছু উন্মোচন করবেন এবং ফাহিমের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন। ফাহিমের হত্যাকাণ্ডকে তার পরিবার অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

বিআলো/ইসরাত