প্রকাশ্যে রূপ নিচ্ছে ১৪ দলের ক্ষোভ-দ্বন্দ্ব 

প্রকাশ্যে রূপ নিচ্ছে ১৪ দলের ক্ষোভ-দ্বন্দ্ব 

নিজস্ব প্রতিনিধি: ২০০৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃতে জোটবদ্ধ হয়ে চলছে চৌদ্দ দল। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন চৌদ্দ দলীয় জোট। নবম এবং দশম সংসদে জোট নেতাদের সরব উপস্থিতি থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন জোট নেতারা। করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর জোটের অবস্থা হয়ে পড়ে আরও নাজুক। ভার্চুয়াল সভা বা দিবসভিক্তিক কর্মসূচির মধ্যেই সীমাবদ্ধ জোটের কার্যক্রম। ফলে শরীক দলগুলোর মধ্যে বাড়ছে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব ও ক্ষোভ।

গত ২৪ জানুয়ারি ভার্চুয়ালি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনার আয়োজন করে চৌদ্দ দলীয় জোট। সেখানে নেতাদের বক্তব্যে অভ্যন্তরীণ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এতে করে সভায় কিছুক্ষণের জন্য অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সভায় জোট নেতাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে খোলামেলা না কথা বলার অনুরোধ জানানো হয়।

চৌদ্দ দলের ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় সমাজতান্ত্রিক দলের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান তার বক্তব্যে বলেন, ‘ভাষা পেয়েছি ঠিকই, ভাষা ও স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন আন্দোলনের সাধ এককদল বহির্ভূত সাধারণ মানুষের ঘরে ওঠেনি। ১৪ দল মাঝে মাঝে সরব হলেও বেশিরভাগ সময় নীরব থাকে। অনেকবার বিষয়টি ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ বললেও সেটা কার্যকর হয়নি। জোটের অভ্যন্তরীণ দলগুলো কীভাবে চলছে, বার বার জানালেও কোনো ফলাফল আসেনি। ১৪ দলের মধ্যে উপযুক্ত চিন্তা করে প্রত্যেক দলকে জনগণের কাছে পৌঁছাতে সক্ষমতা দানে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সভাপতি (আমির হোসেন আমু) যেন এটি ভালো করে তুলে ধরেন।’

তিনি বলেন, ‘জামায়াতসহ বিভিন্ন দল ও জোট দেশ-বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এগুলো করতে তারা সুযোগ পাচ্ছে আমাদের নিজেদের অনেকের কাজের কারণে। ক্ষমতায় থেকে ফুলে ফেঁপে প্রাচুর্যে অনেকে দেশের বাইরে অর্থপাচার করছেন। এগুলো দেখে জামাত জোট আরও শক্তিশালী বিরোধিতা করছে। আমি ও আমার দল সকল সংগ্রামে ছিলাম-থাকবো। তবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের শতভাগ বাস্তবায়ন চাই। ১৪ দলের মধ্যে বঞ্চিত দল ও নেতৃবৃন্দের টিকে থাকার নির্দেশনা চাই।’

ওই সভায় সঞ্চালনা করছিলেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস। তিনি বিষয়টি সভাপতির নজরে আনেন এবং বলেন, ‘সভাপতি, রেজাউর রশিদ খান শহীদ দিবসের আলোচনায় জোটের অভ্যন্তরীণ বিষয় অবতারণা করেছেন। এ বিষয়ে আপনার কথা থাকলে বলতে পারেন।’

চৌদ্দ দলের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ শরীক দলগুলোর সাংগঠনিক অবস্থা বেশ নাজুক। হাতে গোনা দু একটি সংগঠনের রয়েছে তৃণমূলের কর্মী। সেগুলোও অনেকটা আওয়ামী লীগের উপর নির্ভরশীল হয়েছে পড়েছে। নবম এবং দশম সংসদে শরীক দলগুলো মন্ত্রিত্ব পেলেও একাদশ সংসদের তাদের রাখা হয়নি। এদিকে চৌদ্দ দলের কার্যক্রমও চলছে খুড়িয়ে। সব মিলিয়ে শরীক দলগুলোর মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে।

রাজপথে চৌদ্দ দলের কার্যক্রম কেন পরিচালিত হচ্ছে না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনার কারণে এখনো মাঠে নামা সম্ভব হয়নি। এ কারণে আমাদের কর্মসূচিগুলো ভার্চুয়ালি সম্পন্ন করতে হচ্ছে। আগামী মাস থেকে কর্মসূচিগুলো মাঠে গড়াতে পারে।

গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহদাত হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, করোনার পর সব কিছুই একটু ধীর গতিতে এগোচ্ছে। আমাদের বেশিরভাগ নেতারাই প্রবীণ। এ কারণে ভার্চুয়ালি সভার আয়োজন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সাংগঠনিক কার্যক্রমে ক্ষোভের কোন কারণ নেই। কারণ পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে হবে।

ভার্চুয়াল মিটিংয়ে ক্ষোভ প্রকাশের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা বুঝার ভুল। তিনি ক্ষোভের কিছু বলেননি। তিনি যা বোঝাতে চেয়েছিলেন সেটি হয়তো পারেননি।

জাসদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নুরুল আখতার বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, নীতি নির্ধারণে এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ ১৪ দলকে সক্রিয় দেখতে চায় না। এ কারণেই হয়তো মাঠে জোটের শরিকদের দেখা যাচ্ছে না।

বিআলো/শিলি