স্কুল খোলার পর ছাত্র-শিক্ষকদের করণীয়

স্কুল খোলার পর ছাত্র-শিক্ষকদের করণীয়


নিজস্ব প্রতিবেদক:মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘ বিরতির পর আগামী ৩০ মার্চ খুলছে স্কুল-কলেজ। এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষকদের টিকাদান ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও কলেজ শাখার জন্য থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এরই মধ্যে নির্দেশনা দিয়েছে অধিদপ্তর। মহামারির এ সময়কে বলা হচ্ছে ‘নিউ নরমাল’ লাইফ। এ বিষয়ে দুই অধিদপ্তর থেকে সব ধরণের নির্দেশনা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের দেয়া হয়েছে।

নির্দেশনা

মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের সময় সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্টাফদের তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য নন কন্টাক্ট থার্মোমিটারের ব্যবস্থা করতে হবে। নিয়মিতভাবে এ দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দিষ্ট জনবল প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

দুই শিফটের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলে উভয় শিফটের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান বৃদ্ধি করতে হবে যাতে শিক্ষকবিহীন শ্রেণিকক্ষে কোনো শিক্ষার্থী অবস্থান না করে।

কোনো শিক্ষার্থী, শিক্ষক বা স্টাফের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক এর তুলনায় বেশি থাকলে তার তথ্য সংরক্ষণ করা এবং তাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের জন্য সাময়িকভাবে নিরুৎসাহিত করা।

কারো মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণের লক্ষণ থাকলে উপজেলা/জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টেস্টের ব্যবস্থা করাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য চিহ্ন এঁকে রাখা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালীন সময়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সকলেই যেন তা অনুসরণ করে তা নিশ্চিত করা।

অনেক মানুষ স্পর্শ করে এমন জায়গাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন, শ্রেণিকক্ষ, পানি ও স্যানিটেশন সুবিধার জায়গাগুলো পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করা।

উপজেলা/জেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহায়তায় কোভিড-১৯ সংক্রান্ত তথ্য/বিধি হালনাগাদ রাখা এবং সে অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা কমিটির নিয়মিত মিটিং এর ব্যবস্থা রাখা যাতে প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়।

যেভাবে মানতে হবে

শারীরিক দূরত্ব: শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চত্বরে ও খোলা জায়গায় ১ মিটার বা ৩ ফুট দূরত্বে শিক্ষার্থীদের বসার বা বিচরণের ব্যবস্থা করতে হবে। এমনকি বেঞ্চে বসার ক্ষেত্রেও ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। দূরত্ব বজায় রাখার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের পথ, শ্রেণিকক্ষ, টয়লেটসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেসব স্থানে লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে সেসকল স্থানে চিহ্ন এঁকে/মাটিতে দাগিয়ে/টেপ বা দড়ি দিয়ে মার্কিং করা এবং তা অনুসরণ করতে বলতে হবে। প্রবেশ পথের চারপাশে ১ (এক) মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে বিভিন্ন চিহ্ন, মাটিতে দাগানো, টেপ, দড়ি এবং অন্যান্য উপায় ব্যবহার করা যাতে শারীরিক দূরত্ব বজায় থাকে।

মাস্ক পরিধান: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালে পুরো সময় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মীদের মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে ১২ বছর ও তার ঊর্ধ্বে সকলকে মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহিত করা। এই গাইডলাইন অনুযায়ী ৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরার কোনো প্রয়োজন নেই এবং ৬-১১ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য রোগ বিস্তারের ঝুঁকির উপর নির্ভর করে মাস্ক পরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। অন্যদিকে কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য এ নিয়ম কিছুটা ভিন্নভাবে বিবেচনা করা।

হাঁচি কাশির শিষ্টাচার: হাঁচি-কাশি দেবার সময় কনুই দিয়ে নাক ও মুখ ঢেকে ফেলতে হবে। হাঁচি-কাশি দেয়ার পর নিয়ম মেনে হাত ধোয়া। যত্রতত্র কফ-থুথু না ফেলা।

স্যানিটেশন ও ওয়াশ ব্যবস্থা: প্রতি ৩০ জন মেয়ে শিক্ষার্থীর জন্য একটি টয়লেট ও ৬০ জন ছেলে শিক্ষার্থীর জন্য একটি টয়লেট ব্যবহার- এই অনুপাতে টয়লেট সংখ্যা বিবেচনা করতে হবে। টয়লেটে মাসিককালীন পরিচ্ছন্নতা ও স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারের পর বর্জ্যব্যবস্থা সুনির্দিষ্ট থাকতে হবে।

হাত ধোয়ার ব্যবস্থা: ঘন ঘন হাত ধোয়ার জন্য ও শারীরিক দূরত্বের মাপ বজায় রেখে সাবান ও পানিসহ কল/হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। হাত ধোয়ার জায়গা ৩ ফুট/১মিটার দূরত্ব মেনে তৈরি করতে হবে।

জীবাণু মুক্তকরণের সময়সীমা: শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনা, চত্বর, লাইব্রেরি ও ক্যান্টিন এসব জায়গা দিনে অন্তত একবার বা প্রতি শিফট শুরুর আগে ও শেষ হওয়ার পরে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

আলো-বাতাস বা ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা: শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি ও অন্যান্য কক্ষে আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যেখানে সুযোগ আছে সেখানে বাতাসের প্রবাহ ও বাতাস চলাচল বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা (উন্মুক্ত জানালা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের সুযোগ থাকলে তা ব্যবহার করা ইত্যাদি)।

শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উপস্থিতি অনুপাত: প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যানুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুরু ও শেষের সময়সূচী শিফটে ভাগ করে নিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক শারীরিক দূরত্ব মেনে প্রতিটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে। প্রয়োজনে দূর শিখন ও সপ্তাহ বিভাজন করে এক এক দলকে এক এক সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। এসব বিবেচনা করে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভৌত সুবিধাদি বিবেচনা করে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুনরায় আসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এছাড়াও দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে পরিকল্পনা ও শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তার বিষয়েও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এদিকে করোনার কারণে শিক্ষকদের শিক্ষাকার্যক্রমে অংশ নিতে করোনার টিকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং ১০ তারিখের মধ্যে শিক্ষকদের টিকাগ্রহণ শেষে ১৫ তারিখে এ তথ্য অধিদপ্তরে পাঠানোর নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, এমন নির্দেশনা দেয়া হলেও এখনো অনলাইনে ৪০ বছর বয়সের কম বয়সীদের নিবন্ধন করতে সমস্যা রয়েছে। করোনাকালীন সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করতে যেসব শর্ত দেয়া হয়েছে তা অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিশ্চিত করা যাবে না।

সার্বিক বিষয়ে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. বেলাল হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আগামী ৩০ মার্চের মধ্যে আমরা সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্নের চেষ্টা করছি। এ কারণে জেলা পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা আমাদেরকে রিপোর্ট দেবেন।

পরিচালক বেলাল হোসেন আরো বলেন, এখনো রিপোর্ট আসছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনো ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেনি। তাদের আর্থিক সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের নির্দেশনা হলো- স্থানীয় প্রশাসন ও এনজিওর সাহায্য চাওয়া। কারণ অধিদপ্তরের এ বিষয়ে আর্থিক সহযোগিতার সুযোগ নেই। মন্ত্রণালয় যদি এ বিষয়ে ব্যবস্থা করে তবে আর্থিকভাবে ওইসব প্রতিষ্ঠানে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে।

কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি কোনো ধরণের প্রস্তুতি নিতে না পারে তবে কি তারা শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করবে? এমন প্রশ্নে মো. বেলাল হোসেন বলেন, এমন হলে আমাদের কাছে রিপোর্ট আসবে। যদি এমন পরিস্থিতি হয় তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।


বিআলো/শিলি